আমি সেফ জায়গায় আছি, অতঃপর…’

ডেস্ক রিপোর্ট – রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত যশোরের বেজপাড়ার এসকে জেরিন বৃষ্টিকে (২৫) তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার বাদ আসর যশোরের বেজপাড়ায় জানাজা শেষে এলাকার কারবালা গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে বাদ জুমা ঢাকা থেকে বৃষ্টির নিথর দেহ যশোরের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বাবা-মাসহ স্বজনরা। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে এলাকার বাতাস। তার মরদেহ দেখতে বাড়িতে  শত শত নারী-পুরুষ ভিড় জমান।

রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ২৫ জনের একজন বৃষ্টি। যশোর শহরের বেজপাড়ার এসকে মুজাহিদুল ইসলাম এবং শেখ আসিয়া ইসলামের দুই মেয়ের মধ্যে ছোট বৃষ্টি।

মেধাবী বৃষ্টি ইউনাইটেড  ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবসম্পদ বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাস করে যোগ দেন বনানীর এফআর টাওয়ারের ইইউআর সার্ভিস বিডি লিমিটেডের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগে।

নিহতের ফুফু জোহরা জামান পরিবর্তন ডটকমকে জানান, মাত্র তিন বছর আগে ২৬ মার্চ যশোরের পুরাতন কসবা এলাকার কাজী সাদ নূরের সঙ্গে বিয়ে হয় বৃষ্টির। কাজী সাদ নূর ঢাকার রেডিসন হোটেলে কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। এই মাত্র দুই দিন আগে ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি পালন করলো ওরা।

বিবাহবার্ষিকী নিয়ে ফেসবুকে বৃষ্টি লিখেন- “A wedding band is the smallest handcuff ever made, I’m glad I chose my cellmate wisely.”

এর আগে সমুদ্র সৈকতে নূরের সাথে বেড়াতে গিয়ে তিন লিখেন- চলোনা দীঘার সৈকত ছেড়ে ঝাউবনে,
ছায়ায় ছায়ায়, শুরু হোক পথচলা, শুরু হোক কথা বলা..।’

কিন্তু আজ সবই শুধু স্মৃতি।

ফুফু জোহরা জামান জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টায় বৃষ্টি ওর হাজব্যানড নূরকে ফোন দিয়ে অফিসে আগুন লাগার কথা জানায়। এ সময় নূর ওকে ছাদে উঠে অবস্থান নিতে পরামর্শ দেয়। সেই অনুযায়ী সে নয়তলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতেও শুরু করে। ১৬ তলায় উঠে বৃষ্টি ওর খালুকে ফোন করে বলে, ‘আমি সেফ যায়গায় আছি’ কিন্তু বৃষ্টি তখনো জানে না ধোঁয়া আর আগুন সব দিকে ঘিরে আছে ওর পথ। অবস্থা বুঝে বৃষ্টি উপরের দিকে উঠতে থাকে, কিন্তু সে ছাদ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। ১৮ তলার সিঁড়িতেই ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে বৃষ্টি মারা যায়। পড়েছিল তার মরদেহ।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বৃষ্টিকে তুলবার সময় তার নাক-মুখে রক্ত বেরুতে থাকে। মরদেহের সঙ্গে পাওয়া ব্যাগে মোবাইল থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা স্বজনদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মেয়েকে হারিয়ে বৃষ্টির শোকার্ত মা শয্যাশায়ী। আর বাবা মুজাহিদুল ইসলাম ও স্বামী নূর পাগল প্রায়।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ২৫ নিহত এবং ৭৩ জন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।